এইডস কি?
সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রোগ হচ্ছে ‘এইডস'। এটি একটি সংক্রামক রোগ। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম আমেরিকায় AIDS চিহ্নিত হয় এবং তখন থেকে সারা বিশ্বে AIDS মরণব্যাধি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। প্রাকৃতিক নিয়মে সব মানুষের দেহেই রোগ-জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে, একে ইমিউনিটি বলা হয়। আমাদের রক্তের মধ্যে এমন কিছু ব্যবস্থা আছে, যার সাহায্যে আমরা প্রাকৃতিকভাবে সবরকম জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারি। রক্তের লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি প্রস্তুতের মাধ্যমে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। AIDS এ আক্রান্ত ব্যক্তির নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং একসময় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ জন্য রোগটির নাম দেওয়া হয়েছে "অ্যাকুয়ার্ড ইমন ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রম’ যা সংক্ষেপে AIDS (Acquired Immune Deficiency Syndrome)। এক ধরনের ভাইরাস, যার নাম Human Immuno Deficiency Virus এবং যাকে সংক্ষেপে HIV বলা হয়, এই AIDS রোগের সংক্রমণ করে থাকে।
AIDS ড্রোগের কারণ HIV দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দেহে রক্তস্রোত প্রবেশ করার পর HIV-র শ্বেত কণিকার T- লিকোসাইটকে আক্রমণ করে। এ কারণে এগুলো নষ্ট হয়ে যায় দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা। এর ফলে শরীরে নানা রকমের বিরল রোগের সংক্রমণ ঘটে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্বাশতন্ত্রের রোগ, মস্তিষ্কের রোগ, পরিপাকতন্ত্রের রোগ এবং টিউমার। দেখা গেছে HIV ভাইরাস সংক্রমণের পর প্রথম ৫ বছর পর্যন্ত মানুষের দেহে কোনো রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এসব মানুষ তখন এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে এবং তখন তারা অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। এ রোগে কারা বেশি আক্রান্ত হতে পারে সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক কথাই জানা গেছে। প্রধানত যৌন ক্রিয়ার মাধ্যমেই আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হতে পারে। সমকামী কিংবা নারী-পুরুষের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত (unprotected] যৌন সংযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। গর্ভবতী নারী এ রোগে আক্রান্ত হলে তার সন্তানদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে নারীর দেহ থেকে সন্তানের দেহে HIV সঞ্চারিত হয়ে পড়ে। এছাড়া মিনের সময় AIDS আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে কিংবা ড্রাগ ব্যবহারকারীদের সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে HIV সঞ্চারিত হয়ে থাকে। খাল, পানি, মশা বা কীটপতঙ্গ অথবা এইডস রোগীর সাধারণ স্পর্শে এ রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না। তবে রক্ত, বীর্য, লালা, অণু ইত্যাদি শারীরিক মিলনের মাধ্যমে AIDS সংক্রমিত হতে থাকে। AIDS প্রতিরোধ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, HIV সংক্ৰমণ কীভাবে ঘটে সে সম্বন্ধে সবাইকে শিক্ষা দেওয়া। অন্যকে সংক্রমিত না করার ব্যবস্থা অবলম্বন করা এবং নিজেকে HIV সংক্ররমণ থেকে সুরক্ষিত রাখা। রক্তদান বা গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত (unprotected) যৌন সম্পর্ক এবং ব্যবহারকারীদের সিরিজের মাধ্যমে HIV সমণের ঝুঁকি সম্বন্ধে অবহিত করে AIDS রোগের বিস্তার কমানো যায়। সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাগুলো মরণব্যাধি AIDS এর সক্ৰমণ কীভাবে ঘটে সে সম্বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ রোগ থেকে জনসাধারণকে মুক্ত করা যেতে পারে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন